করোনার কারণে আগামী শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভর্তিবাণিজ্যের আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা। বিশেষ করে রাজধানীর নামকরা স্কুলগুলোতে লটারির প্রক্রিয়া ও ফলাফল প্রকাশে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে না পারলে বড় ধরনের অনিয়ম আর বাণিজ্যেরও আশঙ্কা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে লটারি অনুষ্ঠিত হওয়ার দিনে প্রতিষ্ঠানের শূন্য আসনের দ্বিগুণ কিংবা তিন গুণ শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলে উপস্থিত হওয়ার সুযোগ দেয়ারও দাবি তাদের।
গত সপ্তাহে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, করোনার কারণে এ বছর প্রথম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আসন শূন্য থাকাসাপেক্ষে প্রতিটি স্কুল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে লটারির মাধ্যমেই শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। তবে অভিভাবকরা শুরু থেকেই আশঙ্কা করছেন লটারির এই পরিস্থিতি সঠিকভাবে মনিটরিং করা না গেলে রাজধানীর অনেক নামী-দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্যের পথ আরো প্রশস্ত হবে। ন্যায্য প্রাপ্য থেকেই বঞ্চিত হবে অনেক শিক্ষার্থী।
গত ২৫ নভেম্বর মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী ভর্তিসংক্রান্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি জানিয়েছেন, করোনার কারণে বাধ্য হয়েই আগামী শিক্ষাবর্ষে সব শ্রেণীতেই লটারির মাধ্যমে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানিয়েছেন, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও লটারির মাধ্যমে ভর্তি করা হবে। ওই দিনের সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, সব ক্ষেত্রে যাতে সাম্য নিশ্চিত হয়, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরাও যাতে ভালো প্রতিষ্ঠানে আসতে পারে, সেই জন্যই এই লটারির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থী ভর্তিতে লটারির প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির বিষয়ে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবির দুলু গতকাল সোমবার নয়া দিগন্তকে জানান, লটারিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে না পারলে ভর্তিবাণিজ্যের পথ আরো প্রশস্ত হবে। তিনি বলেন, লটারি পরিচালনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সৎ ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটিতে অভিভাবকদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে। একই সাথে যে স্কুলের লটারি অনুষ্ঠিত হবে সেখানকার প্রতিটি ক্লাসের শূন্য আসনের দ্বিগুণ কিংবা তিন গুণ শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের লটারির সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলে উপস্থিত থাকার অনুমতি দিতে হবে।
লটারিতে শিক্ষার্থী ভর্তির এই উদ্যোগের বিষয়ে মতিঝিল আইডিয়ের স্কুলের আমিরুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক জানান লটারিতে কোনো প্রকার জালিয়াতি বা কৌশল অবলম্বন করা হলো কি না সেটিও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে। লটারির পরও গোপনে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে কি না তাও মনিটরিং করতে হবে। আর এসব কাজ সূচারুরূপে করতে পারলেই কেবল আবেদন বাছাইয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত ও ভর্তি বাণিজ্য বন্ধ হবে।
ঢাকা বোর্ডের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ জিয়াউল হক বলেন, লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়াতে ভালোমন্দ দুটো দিকই আছে। কেননা করোনার এই সঙ্কটময় সময়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হলে শিক্ষার্থীরা আরো ঝুঁকিতে পড়বে। তাই তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েই লটারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ভালো বিদ্যালয়গুলো শুধু ভালো শিক্ষার্থী বাছাই করে নিয়ে পড়াবে তা না হয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বলদেরও ভালো করাবে এটা লটারির একটি ভালো দিক। অন্য দিকে ভালো শিক্ষার্থীর জন্য ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও প্রয়োজন। তাই শিক্ষার্থী ভর্তির আগে ন্যূনতম পরীক্ষা বা মূল্যায়ন প্রয়োজনও রয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
লটারির বেশ কিছু ইতিবাচক দিক তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী জানান, আমাদের পাঠ্যক্রম পদ্ধতিতে যে পরিবর্তন আসছে, তাতে একজন শিক্ষার্থী কোনো স্কুলে পড়ছে তা নিয়ে খুব বেশি একটা তফাত থাকবে না। শিক্ষার্থীরা স্কুলেই পড়ুক না কেন টেলিভিশনে যে ক্লাসগুলো হচ্ছে তা সবার জন্য সমান মানের। এ ছাড়া ২০২২ সালে যে শিক্ষাক্রম আসছে, কোন স্কুল কতটা নামী, আর বাকি শিক্ষার্থীরা কতটা মেধাবী, সেটার চেয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থী নিজে নিজে দলগতভাবে, কমিউনিটির সাথে হাতে-কলমে কিভাবে কাজ করবে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
Leave a Reply